Sale

বাণিজ্য ও বাংলাদেশের জনগণ

Original price was: TK. 350.Current price is: TK. 250.

Edition: 2nd: February 2022

No Of Page: 143

Language:

Country: বাংলাদেশ

Description

“বাণিজ্য ও বাংলাদেশের জনগণ” বইটির ‘গ্রন্থনা প্রসঙ্গে’ অংশ থেকে নেয়াঃ গত দুই দশকে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন হল: এককেন্দ্রিক বিশ্ব কাঠামােয় একটি একক অর্থনৈতিক আদলে দুনিয়াব্যাপী সম্পর্কের পুনর্বিন্যস। সব রাষ্ট্রের সম্পর্কে প্রধানত পুঁজির বৈশ্বিক চলাচল, বিচলন, বিনিয়ােগ ও বিশ্ববাজারের অধীনে সাজানাে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মধ্যে উন্নয়নশীল স্বল্পোন্নত ইত্যাদি বিভিন্ন পক্ষ বা অর্থনৈতিক জোটের আর্বিভাব সূচিত হয় এরই ধারাবাহিকতায়। প্রয়ােজন, সক্ষমতা ও অভ্যন্তরীণ উপকরণের সুবিধা বিবেচনায় কোন স্বাধীন ও স্বতন্ত্র আর্থিক পরিকল্পনায় আগেকার জাতীয় অর্থনীতি বিকাশের ধারণার অবসান ঘােষণা করা হয়। রপ্তানীমুখি উৎপাদন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উন্নয়নের একমাত্র চাবিকাঠি বলে প্রচার করা হয়। তথাকথিত অবাধ বাজারের ভিতর দিয়ে যা অর্জিত হবে বলে সাব্যস্ত হয়। বহুপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের তখন সম্মিলিত প্রয়াস হয়ে দাঁড়ায় একীভূত এবং অভিন্ন শাসনের আওতায় দুনিয়াব্যাপী একটি বাণিজ্য কাঠামাে (trade regime) প্রতিষ্ঠা করা। ঘটে যাওয়া এসব পরিবর্তন এবং এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল নিয়ে নিয়ে ফরহাদ মজহার নানান সময়ে লিখেছেন। ফলে তার আলােচনা শুধু বাণিজ্যের গত্বাধা তর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। স্বভাবতই তা আলাে ফেলেছে, রাষ্ট্র, রাজনীতি, পরিবেশ ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবন-জীবিকার মত সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলাের দিকে। মরােক্কোর মারাকেশ শহরে ১৯৯৪ সালে ১২ থেকে ১৫ এপ্রিল, আয়ােজিত মন্ত্রী পর্যায়ের সভায় গ্যাটের উরুগুয়ে রাউন্ডের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সভায় বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (World Trade Organization) প্রতিষ্ঠার জন্য মারাকেশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সে বছরই পাক্ষিক চিন্তা পত্রিকা বিশেষ ক্রোড়পত্র করেছিল, ‘গ্যাট, বিশ্ব বাণিজ্য ও তৃতীয় বিশ্বম্ব শিরােনামে ৩০ এপ্রিল, ১৯৯৪ তারিখ সংখ্যা। ফরহাদ মজহারের বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এছাড়া একটি খুদে পুস্তিকা ২০০৪ সালে চিন্তা প্রকাশনা থেকে বেরিয়েছিল। সেটা আর সহজলভ্য নয়। সেগুলাে প্রধানত ছিল মেক্সিকোর কানকুন শহরে ২০০৩ সালে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সদস্যভূক্ত দেশগুলাের বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের পঞ্চম সম্মেলনকে ঘিরে, বিশ্ববাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই। শেষ পর্যন্ত কোনপ্রকার সমঝােতা ছাড়াই সেই সম্মেলনের আলােচনা পণ্ড হয়ে যায়। বিশেষ করে কৃষিচুক্তির প্রশ্নে তৃতীয় বিশ্বের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিরােধের মুখে ধনী দেশগুলাে পিছু হটে। কিন্তু বিশ্ববাণিজ্য, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার ভূমিকা নিয়ে ফরহাদ মজহারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ লেখা তখন ঐ খুদে পুস্তিকায় গ্রন্থভুক্ত করা হয়নি। যেমন, সিয়াটেলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার তৃতীয় মন্ত্রী পর্যায়ের সভা সংক্রান্ত তাঁর লেখালেখি, কিম্বা | তথাকথিত স্বল্পোন্নত দেশগুলাের সম্মেলন নিয়ে নিবন্ধ । তাছাড়া বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির পরেও ধনী দেশগুলাে ক্রমাগত দুর্বল দেশগুলাের ওপর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির জন্য চাপ দিয়ে চলছিল, সেইসব বিষয়ে লেখাগুলােও এর আগে গ্রন্থভূক্ত হয়নি। এখানে এবারই প্রথম গ্রন্থভূক্ত হল। নব্বই দশকের শুরু থেকেই সারা বিশ্বে গ্লোবালাইজেশান বা গােলােকায়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছিল, বাংলাদেশেও অনেক প্রগতিশীল সংগঠন ও ব্যক্তি সক্রিয়ভারে তার বিরােধিতা করছিলেন। এন্টি-গ্লোবালাইজেশান বা পুঁজিতান্ত্রিক গােলােকায়ন বিরােধী আন্তর্জাতিক সংগ্রাম পুঁজিতান্ত্রিক গােলােকায়ন বা সাম্রাজ্যবাদের প্রশ্নকে এই সময়ের প্রধান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রশ্ন আকারে হাজির করতে পারলেও নানা কারণে এই সংগ্রাম ক্রমে ক্রমে নুইয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পুঁজিতান্ত্রিক গােলােকায়ন বিরােধী প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও সংগ্রামের প্রধান অবদান হচ্ছে বাংলাদেশের মত দেশগুলাের জন্য বিশ্ববাণিজ্য চুক্তি ও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার আসল তাৎপর্য কি সেই দিকগুলাে ব্যাখা করা। এই ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণগুলাে ধনী দেশগুলাের সাথে গরিব দেশগুলাের বাণিজ্য নিয়ে দরকষাকষির ক্ষেত্রে কাজে লেগেছে বটে, কিন্তু পুঁজিতান্ত্রিক গােলােকায়ন ও বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে গরিব দেশ ও জনগণকে যদি লড়ে জিততে হয় তাহলে যে চরিত্রের রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রশক্তির গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের সীমা ও সম্ভারনা বিকশিত করা দরকার সে দিকটা নিয়ে আলােচনা খুব কমই হয়েছে। আজ অবধি এ দিকটি অস্পষ্ট থেকে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করে একদিকে রাষ্ট্র তার অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে, অন্যদিকে তাকে রহুপাক্ষিক চুক্তিতে বাংলাদেশের মতাে দেশগুলাে যে ছাড় দিয়ে এসেছে তার চেয়েও রাড়তি ছাড় দেবার জন্য ধনী দেশগুলাে ক্রমাগত হাত মুচড়ে চলেছে। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলাে ক্রমাগত তাদের নীতি ও কৌশল বদল করেছে। তার ধাক্কা সামলাবার জন্য বাংলাদেশের মতাে রাষ্ট্রগুলাের পুনর্গঠনের পথ কি? কিভাবে রাষ্ট্রশক্তিকে গণশক্তিতে পরিণত করতে হবে সেই দিকগুলাে পরিবর্তিত এই বাস্তবতার আলােকেই আমাদের ভাবতে হবে।

Related Products