Sale

দিনলিপি

Original price was: TK. 850.Current price is: TK. 680.

Edition: Update Edition, 2022

No Of Page: 592

Language:

Country: বাংলাদেশ

Description

বড় বড় মানুষদেরও ছোট ছোট দুঃখ-কষ্ট থাকে, ব্যক্তিগত নানা অপূর্ণতা, অপ্রাপ্তি থাকে, যা তঁাদের কষ্ট দেয়। অথচ, বড় বড় এসব মানুষ তাঁদের মেধা ও প্রতিভা দিয়ে, নিজেদের বুদ্ধিবৃত্তির সর্বোত্তম প্রকাশ ঘটিয়ে আমাদের জীবন নিষ্কণ্টক করার জন্য কতই না পথ রেখে যান। তাঁদের দেখানো পথে আমরা হাঁটতে পারি না, যেহেতু আমাদের সেই পা নেই, সেই শক্তি নেই। ফলে জীবনের সঙ্গে নানা বিবাদে জড়িয়ে পড়ি আমরা, ভুলে থাকি বড় মানুষদের। আমাদের জীবন অকিঞ্চিৎকর হয়ে দাঁড়ায়।

অথচ কতখানি পূর্ণতা আমরা অর্জন করতে পারতাম, কতখানি পূর্ণতা ওই সব বড় মানুষেরা অর্জন করেছেন—সেটি ভেবে আমাদের গ্লানি হয়, বড়দের আরও বড় মনে হয়, নিজেদের আরও ছোট। কখন? যখন তাঁদের বয়ানে তাঁদের অসামান্য জীবনকে আমরা জানতে পারি। তাঁদের লেখা পড়ে, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও মন্তব্য টিকা টিপ্পনী পড়ে। অথবা তাঁদের আত্মজীবনীমূলক রচনা পাঠের পর। এসব লেখার একটা মূল্য আছে এই কারণে যে, এসব লেখায় আমরা নিজেদেরও দেখতে পাই, এবং দেখে কুণ্ঠিত, লজ্জিত হই। আমরা কেন লিলিপুট, তারা কেন গালিভার, সে চিন্তাটি প্রবল হয়। আমরা বুঝতে পারি, বড় হওয়াটা সহজ কাজ নয়। বড়দের মধ্যেও বড় থাকেন কেউ কেউ, যেমন সরদার ফজলুল করিম। আজ তাঁর নব্বইতম জন্মদিন। দর্শনবিদ, পণ্ডিত, চিন্তাবিদ এই মানুষটি ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন নির্মোহ, বিনয়ী ও জ্ঞানপিপাসু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাদের শিক্ষক ছিলেন, কিন্তু তাঁর বিচরণ ছিল সমাজতত্ত্ব থেকে সাহিত্য, রাজনীতি থেকে লোকজ সংস্কৃতির নানা অঞ্চলে। আমরা তাঁকে জানতাম এক অত্যাশ্চর্য মানুষ হিসেবে, যিনি একাধারে নীতি ও নন্দনতত্ত্বের পূজারি, সারা বিশ্বের জ্ঞানভান্ডারকে নিজের মেধা দিয়ে জানার সাধনায় লিপ্ত এক নিবেদিতপ্রাণ মানুষ এবং অর্জিত জ্ঞান অনুসারীদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সংকল্পে স্থিত একজন শিক্ষক। তাঁর সঙ্গে পরিচয় ছিল, ঘনিষ্ঠতা ছিল না, কিন্তু মানুষটিকে আমি শ্রদ্ধা করেছি, ভালোবেসেছি তাঁর ব্যক্তিত্বের গুণের জন্য। এ রকম মানুষ সব যুগে অনেক আসেন, তা বলা যাবে না, ইউরোপের কোনো দেশ হলে তিনি পরিচিতি পেতেন সারা বিশ্বে। কিন্তু এ নিয়ে কোনো খেদ নেই আমার, যেহেতু বাংলাদেশে তাঁর যে অবস্থান, তা ওই বৈশ্বিক স্বীকৃতি থেকে কোনো অংশে কম উজ্জ্বল নয়। সরদার ফজলুল করিমের লেখালেখির সঙ্গে দীর্ঘকালের পরিচয় আমার। এবং বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অসংখ্য মানুষেরও। আমি দেখেছি, তাঁর লেখার চারটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় রয়েছে—জ্ঞানকে তিনি মূলভূমি হিসেবে দেখেছেন। এ জন্য তাঁর লেখায় জ্ঞানের স্বপক্ষে একটা প্রচার চলে সব সময়; তিনি আধুনিক মানুষের সমস্যাগুলো উপমহাদেশীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখেছেন, ফলে ইউরোকেন্দ্রিকতাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন, একে পুনর্নির্মাণ করতে পারেন; তিনি সমষ্টি থেকে ব্যক্তিমানুষে বেশি উৎসাহী, এবং লঘু-গুরুর প্রথাগত বিচারে যান না। তাঁর মতে, সর্বহারা ও সর্বজয়ী একই কাতারভুক্ত—সমস্যা শুধু ভঙ্গিতে, চর্চাতে। এবং চতুর্থত, তাঁর লেখা ভীষণ রকম সমসাময়িক, আমি নিশ্চিত এক শ বছর পর তাঁকে পাঠক যেমন পড়বে, তেমন তাঁকে পাঠ করছে আমাদের সময়।

Related Products