কৃষ্ণকান্তের উইল
TK. 140 Original price was: TK. 140.TK. 110Current price is: TK. 110.
Categories: চিরায়ত উপন্যাস
Author: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
Edition: সপ্তম সংস্করণ, ২০১৭
No Of Page: 110
Language:BANGLA
Publisher: বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র
Country: বাংলাদেশ
প্রথম পরিচ্ছেদ
হরিদ্রাগ্রামে এক ঘর বড় জমিদার ছিলেন। জমিদারবাবুর নাম কৃষ্ণকান্ত রায়। কৃষ্ণকান্ত রায় বড় ধনী; তাঁহার জমিদারির মুনাফা প্রায় দুই লক্ষ টাকা । এই বিষয়টা তাঁহার ও তাঁহার ভ্রাতা রামকান্ত রায়ের উপার্জিত। উভয় ভ্রাতা একত্রিত হইয়া ধনোপার্জন করেন। উভয় ভ্রাতার পরম সম্প্রীতি ছিল, একের মনে এমত সন্দেহ কস্মিন্ কালে জন্মে নাই যে, তিনি অপর কর্তৃক প্রবঞ্চিত হইবেন। জমিদারি সকলই জ্যেষ্ঠ কৃষ্ণকান্তের নামে ক্রীত হইয়াছিল। উভয়ে একান্নভুক্ত ছিলেন। রামকান্ত রায়ের একটি পুত্র জন্মিয়াছিল— তাহার নাম গোবিন্দলাল। পুত্রটির জন্মাবধি, রামকান্ত রায়ের মনে মনে সংকল্প হইল যে, উভয়ের উপার্জিত বিষয় একের নামে আছে, অতএব পুত্রের মঙ্গলার্থ তাহার বিহিত লেখাপড়া করিয়া লওয়া কর্তব্য। কেননা, যদিও তাঁহার মনে নিশ্চিত ছিল যে, কৃষ্ণকান্তের কখনও প্রবঞ্চনা অথবা তাঁহার প্রতি অন্যায় আচরণ করার সম্ভাবনা নাই, তথাপি কৃষ্ণকান্তের পরলোকের পর তাঁহার পুত্রেরা কী করে, তাহার নিশ্চয়তা কী? কিন্তু লেখাপড়ার কথা সহজে বলিতে পারিলেন না— আজি বলিব, কালি বলিব, করিতে লাগিলেন । একদা প্রয়োজনবশত তালুকে গেলে সেইখানে অকস্মাৎ তাঁহার মৃত্যু হইল ।
যদি কৃষ্ণকান্ত এমত অভিলাষ করিতেন যে, ভ্রাতুষ্পুত্রকে বঞ্চিত করিয়া সকল সম্পত্তি একা ভোগ করিবেন, তাহা হইলে তৎসাধন পক্ষে এখন আর কোনো বিঘ্ন ছিল না । কিন্তু কৃষ্ণকান্তের এরূপ অসদভিসন্ধি ছিল না । তিনি গোবিন্দলালকে আপন সংসারে আপন পুত্রদিগের সহিত সমানভাবে প্রতিপালন করিতে লাগিলেন, এবং উইল করিয়া আপনাদিগের উপার্জিত সম্পত্তির যে অর্ধাংশ ন্যায়মতো রামকান্ত রায়ের প্রাপ্য, তাহা গোবিন্দলালকে দিয়া যাইবার ইচ্ছা করিলেন ।
কৃষ্ণকান্ত রায়ের দুই পুত্র, আর এক কন্যা। জ্যেষ্ঠপুত্রের নাম হরলাল, কনিষ্ঠের নাম বিনোদলাল, কন্যার নাম শৈলবতী। কৃষ্ণকান্ত এইরূপ উইল করিলেন যে, তাঁহার পরলোকান্তে, গোবিন্দলাল আট আনা, হরলাল ও বিনোদলাল প্রত্যেকে তিন আনা, গৃহিণী এক আনা, আর শৈলবতী এক আনা সম্পত্তিতে অধিকারিণী হইবেন ।