Sale

রামের সুমতি

Original price was: TK. 130.Current price is: TK. 110.

Description

এক
রামলালের বয়স কম ছিল, কিন্তু দুষ্টুবুদ্ধি কম ছিল না। গ্রামের লোকে তাহাকে ভয় করিত। অত্যাচার যে তাহার কখন কোন দিক দিয়া কীভাবে দেখা দিবে, সে কথা কাহারও অনুমান করিবার জো ছিল না । তাহার বৈমাত্র বড়ভাই শ্যামলালকেও ঠিক শান্ত-প্রকৃতির লোক বলা চলে না, কিন্তু সে লঘু অপরাধে গুরুদণ্ড করিত না। গ্রামের জমিদারি কাছারিতে সে কাজ করিত এবং নিজের জমিজমা তদারক করিত।
তাহাদের অবস্থা সচ্ছল ছিল। পুকুর, বাগান, ধানজমি, দু’-দশ ঘর বাগদী প্রজা এবং কিছু নগদ টাকাও ছিল। শ্যামলালের পত্নী নারায়ণী যেবার প্রথম ঘর করিতে আসেন,— সে আজ তেরো বছরের কথা— সেই বছরে রামের বিধবা জননীর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তিনি আড়াই বৎসরের শিশু রাম এবং এই মস্ত সংসারটা তাঁহার তেরো বছরের বালিকা পুত্রবধূ নারায়ণীর হাতে তুলিয়া দিয়া যান ৷
এ বৎসর চারিদিকে অত্যন্ত জ্বর হইতেছিল। নারায়ণীও জ্বরে পড়িলেন। তিন-চারিটা গ্রামের মধ্যে একমাত্র খানিকটা-পাসকরা ডাক্তার নীলমণি সরকারের একটাকা ভিজিট দু’টাকায় চড়িয়া গেল এবং তাঁহার কুইনিনের পুরিয়া অ্যারারুট ও ময়দা সহযোগে সুখাদ্য হইয়া উঠিল। সাতদিন কাটিয়া গেল, নারায়ণীর জ্বর ছাড়ে না। শ্যামলাল চিন্তিত হইয়া উঠিলেন।
বাড়ির দাসী নৃত্যকালী ডাক্তার ডাকিতে গিয়াছিল, ফিরিয়া আসিয়া বলিল, আজ তাঁকে ভিন গাঁয়ে যেতে হবে— সেখানে চার টাকা ভিজিট— আসতে পারবে না । শ্যামলাল ক্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন, আমিও না-হয় চার টাকাই দেব, টাকা আগে, না প্রাণ আগে? যা তুই, চামারটাকে ডেকে আন্ গে ।
নারায়ণী ঘরের ভিতর হইতে সেকথা শুনিতে পাইয়া ক্ষীণস্বরে ডাকিয়া বলিলেন, ওগো, কেন তুমি অত ব্যস্ত হচ্ছে? ডাক্তার না-হয় কালই আসবে, একদিনে আর কী ক্ষেতি হবে?

Related Products